Home / এক্সক্লুশিভ / ‘আমার চিন্তা আমি করলেই ভালো’

‘আমার চিন্তা আমি করলেই ভালো’

ওল্ড ডিওএইচএসের যে অ্যাপার্টমেন্টে তিনি থাকেন, নিজের বাসায় ডাকলে সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে সাকিব আল হাসান এর গ্যারেজেই নেমে আসেন সব সময়। গতকালও এর ব্যতিক্রম হলো না। কিন্তু সমস্যা হলো, দুপুরের তীব্র গরমে মিনিট পনেরোর আলাপের সময় অন্য সবার মতো ঘামে ভিজলেন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার। ভিজতে ভিজতেই দিলেন টেস্ট থেকে তাঁর বিশ্রাম চাওয়ার ব্যাখ্যা।

প্রশ্ন : আপনার মুখ থেকেই শুনতে চাই ঠিক কী কারণে বিশ্রাম চেয়েছেন?

সাকিব আল হাসান : আমি মনে করি আমার আরো অনেক দিন খেলা বাকি আছে। আমি যদি তত দিন খেলতে চাই এবং ভালোভাবে খেলতে চাই, তাহলে আমার এই বিশ্রামটা জরুরি। আমি চাইলেই খেলতে পারি। এখন আমার কথা হচ্ছে আপনারা কী চান? আমি আরো পাঁচ-ছয়-সাত বছর খেলি নাকি আর মাত্র এক-দুই বছর? আমি যদি এখন খেলতে থাকি, তাহলে এক-দুই বছর পর আর ভালোভাবে খেলতে পারব না। সুতরাং আমার কাছে মনে হয়, এখন খেলার চেয়ে না খেলাই ভালো। আশা করি আমি আরো ঝরঝরে হয়ে ফিরতে পারব। সেটি শারীরিকভাবে যতটা না, তার চেয়ে বেশি মানসিকভাবে।

সে ক্ষেত্রে হয়তো পরের পাঁচ বছর কোনো টেনশন ছাড়াই আমার পক্ষে খেলা সম্ভব হবে।
প্রশ্ন : এখন যে বিরতিটা নিলেন, সেটা কি যথেষ্ট?

সাকিব : দক্ষিণ আফ্রিকায় দুটো টেস্ট যদি আমি না খেলি, তাহলে দেখবেন সব মিলিয়ে এক মাসের একটা বিরতি পেয়ে যাব। এই বিরতিটা গত তিন-চার বছরে আমি পাইনি। আমার জন্য এটাই অনেক। এ জন্য বিসিবিকে ধন্যবাদ জানাই, তারা আমার প্রয়োজনটা বুঝতে পেরেছে। আমার বক্তব্য শোনার পর তাদেরও যৌক্তিক মনে হয়েছে।

প্রশ্ন : এমন প্রচারণাও তো আছে যে টি-টোয়েন্টি বেশি খেলার জন্যই এ বিশ্রাম।

সাকিব : দেখুন, আমার শরীরের প্রয়োজনটা আমিই সবচেয়ে ভালো বুঝি। ওয়ানডে বা টি-টোয়েন্টি থেকে কেন বিশ্রাম নিলাম না বা বাইরের কোনো টি-টোয়েন্টি আসরে কেন কম খেললাম না—এ প্রশ্নগুলো যখন আসে, একটু অবাকই লাগে। বাইরের কোনো টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্টে যখন খেলি, তখন না থাকে কোনো চাপ বা অন্য কিছু। আমার মনে হয় ছুটির আমেজে খেলছি। কিন্তু টেস্ট ম্যাচে যেহেতু আমি ব্যাটিং-বোলিং দুটিই করি, চারটি ইনিংসেই আমার অবদান রাখার দরকার হয়। দলও তা-ই প্রত্যাশা করে। আমি যদি অর্ধেক অবদান রাখি আর অর্ধেক না রাখি, তাহলে কিন্তু দলকে পুরোটা দেওয়া হলো না। না দিতে পারাটা আমার কাছে কখনোই ভালো দিক বলে মনে হয় না। আমি তো চাইলেই খেলতে পারি। ম্যাচ ফিও পাব, বেতনও পাব—সবই পাব। কিন্তু এভাবে খেলাটা আমার কাছে ঠিক বলে মনে হয় না।

প্রশ্ন : প্রথম কবে মনে হলো যে বিশ্রামটা নেওয়া দরকার?

সাকিব : অনেক আগেই। অস্ট্রেলিয়া সিরিজের আগেই আমি এটা নিয়ে কথা বলে রেখেছি। আমার স্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছি। আমার যারা ঘনিষ্ঠ, তারা সবাই জানত যে আমি এ রকম চিন্তা করছি। আর এমন তো না যে দু-এক বছর খেলেই ছেড়ে দিচ্ছি। ১১ বছর তো হয়েই গেল। একটা বিরতি তো নিতেই পারি। এটা আমার প্রাপ্যও।

প্রশ্ন : লাসিথ মালিঙ্গার মতো তারকা ক্রিকেটাররা শুধু রঙিন পোশাকের ক্রিকেটই খেলেন। এমন কিছু হবে না তো আবার?

সাকিব : এমন নয় যে আমি আর ক্রিকেটই খেলছি না। অবশ্যই টেস্ট খেলব। আমার ইচ্ছা আছে সবার শেষে টেস্ট থেকে অবসর নেওয়ার। তবে নিজের মনের কথা সব সময় সবাইকে বলার দরকার আছে বলে আমার মনে হয় না। আমার ভেতর কী আছে, সেটা আমি জানি। আমার কাছে এক-দুই বছর খেলার চেয়ে পাঁচ-ছয় বছর মন থেকে খেলা অনেক গুরুত্বপূর্ণ।

প্রশ্ন : দলে আপনার অভাবও তো অনুভূত হবে।

সাকিব : না, আমি মনে করি আমার না থাকার প্রভাব খুব বেশি পড়বে না। দুনিয়ায় কোনো জিনিসই কারো জন্য অপেক্ষা করে না। সুতরাং আমি মন থেকে বিশ্বাস করি, বাংলাদেশ দল দক্ষিণ আফ্রিকায় অনেক ভালো করবে। আমাদের উন্নতির ধারাটাও অব্যাহত থাকবে। দক্ষিণ আফ্রিকা সফরটি যেহেতু অনেক চ্যালেঞ্জিংও, তাই সবার মধ্যে বাড়তি চেষ্টাও থাকবে।

প্রশ্ন : দক্ষিণ আফ্রিকা সফরের চ্যালেঞ্জের কথা বললেন। আবার অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে আপনার ও তামিম ইকবালের পারফরম্যান্স ছাড়া জেতাও সম্ভব হতো তা। এ অবস্থায় বিরতিটা কি একটু পরে নিলে হতো না?

সাকিব : যদি পরে নিলে হতো মনে হতো আমার কাছে, তাহলে আমি পরেই নিতাম। আমার মনে হয়েছে এখনই নেওয়ার আদর্শ সময়। সে কারণেই নেওয়া। আসলে সবার মন তো আর এক রকম হবে না। দিন শেষে আপনি আমার জায়গায় থাকলে আমার অবস্থানটা বুঝতে পারতেন।

প্রশ্ন : প্রচুর বোলিং করতে হয় বলেই কি বিরতি নেওয়ার চিন্তাটা মাথায় আসে?

সাকিব : এমন নয় যে আমি বোলিং করতে পছন্দ করি না। চেষ্টা থাকে যে সবার আগে ব্যাটিংয়ে নেমে শেষ পর্যন্ত থাকি। মাঠেও থাকার চেষ্টা করি সব সময়, শতভাগ দেওয়ার চেষ্টা করি। যখন মনে হয় যে পুরোটা সময় আমি শতভাগ দিতে পারব না, তখনই বিরতির কথা মাথায় আসে।

প্রশ্ন : আপনার সিদ্ধান্ত নিয়ে তো সমালোচনাও আছে।

সাকিব : লোকে সমালোচনা করবে, এটাই স্বাভাবিক। দুনিয়ায় এমন কোনো কিছুই হয় না যে কেউ কিছু একটা বলল আর সবাই সেটার সঙ্গে একমত হয়ে গেল। স্বাভাবিকভাবেই আমার সিদ্ধান্তের সঙ্গে সবাই একমত হবে না।

প্রশ্ন : সাবেক অধিনায়কদের একজন বলেছেন, ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটও আপনার বেছে বেছে খেলা উচিত।

সাকিব : তাঁদের ভাবনা তাঁদের কাছে থাক। বললাম না, লোকের ধারণা একেক রকম হবেই। সেসব নিয়ে চললে আমার জন্য ভালো কিছু হবে না। আমার চিন্তাটা আমিই করি। আমার চিন্তা আমি করলেই সব থেকে ভালো হয়। আমি যেন ভালোভাবে চিন্তা করতে পারি, আপনাদের কাছে সেই সমর্থনটাও আশা করি।

About bnews

Check Also

আইফোনের স্টোরেজ বাড়ানোর কয়েকটি সহজ উপায়

আইফোন বাজারে আসার পর থেকেই এর ফিচারে নানা ধরনের পরবির্তন এসেছে। কিন্তু আইফোন ব্যবহারকারীদের একটি …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *